তার লিখিত “তাবলীগ” নামক পুস্তিকাটিতে মীলাদের সময় কিয়াম করাকে বিদয়াত বা নিন্দনীয় কাজ নয় বরং তা মুস্তাহাব বলে ফতোয়া দিয়েছে । মৌলভী আশরাফ থানভীর ভক্ত, মুরীদ ও অনুগত শিষ্যরা ভারত উপমহাদেশে অনেক দ্বীনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছে । যেগুলো কওমী বা ওহাবী মাদরাসা নামে সর্বজন পরিচিত ।
- আর এ সব মাদরাসায় উক্ত “তাবলীগ” নামক পুস্তিকাটি সিলেবাস ভুক্ত করে পাঠ দান করা হয় । উক্ত বইয়ের ৩৮ পৃষ্ঠায় মৌলভী আশরাফ থানভী বলে- অর্থাৎ- “ এভাবে কিয়াম করাকে আমরা অবৈধ বলি না বরং কোথাও রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা কালে দাঁড়িয়ে যায়, আবার কখনো তার দুগ্ধ পানের ঘটনা বলার সময়, আবার কখনো মি’রাজুন্নবীর আলোকপাত কালে, এমনিভাবে কোন কোন খাস মাহফিলে ৩/৪ বারও কিয়াম করে থাকেন । তবে এরুপ মীলাদে কিয়াম করাকে কে নিষেধ করবে ?”
এ কথা চির সত্য যে, মৌলভী আশরাফ থানভী সাহেব হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজিরে মক্কী রহমাতুল্লাহে আলাইহি-এর সাহচার্যে যতদিন ছিল, ততদিন স্বীয় পীর সাহেব এর অনুকরণে মীলাদ শরীফে কিয়াম করত । পরবর্তীতে যখন ওহাবী ও নজদী আক্বীদা ভারত উপ-মহাদেশে বিস্তার লাভ করতে লাগল তখন সে মীলাদ-মাহফিল ও কিয়াম সম্পর্কে নমনীয় সুরে কথা বলত যাতে উভয় দল তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে । কোন এক আলোচনা সভায় সে বলেছিল-
- অর্থাৎ- “প্রচলিত মীলাদ মাহফিলের ব্যাপারে সুফী সাধকদের অনুসৃত আমলকে আমি ভিত্তিহীন মনে করি না । শাফেয়ী মাযহাবের মুজতাহিদ বা গবেষক ফিকহ শাস্ত্রবীদদের অভিমতও উহাই । আল্লামা ইমাম শামী রহমাতুল্লাহে আলাইহি তার প্রনীত কিতাবে “মুসাফাহা বা’দাস সালাত” অধ্যায়ে শাইখ আবু যাকরিয়া মহিউদ্দিন নবভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি-এর অনুরুপ অভিমত বলে বর্ণনা করেছেন । কাজেই যে সব সুফীয়ায়ে কিরাম বিশুদ্ধ পন্থায় মীলাদ মাহফিল করেন, তাদের ব্যাপারে আপত্তিমুলক খারাপ ধারণা না করাই উচিত ।“
(মাজালিছে হাকীমূল উম্মত, রচনায় : মুফতী মুহাম্মদ শাফী, পৃষ্ঠা- ১৬৩)
মৌলভী রশিদ আহমদ গাংগুহী ও মৌং আবুল কাশেম নানতুভী সহ কিছু মোল্লা-মৌলভী যখন মীলাদ মাহফিল ও কিয়ামের মাসয়ালাকে কেন্দ্র করে হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজিরে মক্কি রহমাতুল্লাহে আলাইহি কে বিদয়াতী বলে ফতোয়াবাজী শুরু করেছে, এমন সময় নিজের পীর মুরশীদের পক্ষে কলম ধরে মৌলভী আশরাফ থানভী । বলে-
- “অর্থাৎ- হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজিরে মক্কী রহমাতুল্লাহে আলাইহি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অবিকল আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন । (বিশেষ করে) তার এসব আমল তথা প্রচলিত মীলাদ ও কিয়াম অনুষ্ঠানে যোগদান, বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে তা সমর্থন করা কোন ভ্রান্ত আকীদা বা শিয়া ধর্মের অনুকরণে ছিল না । বরং এহেন মহৎ আমলগুলো যেহেতু মূলত বৈধ, তাই তিনি বৈধ কাজকে পূণ্যময় মনে করে নিজে করতেন এবং অপরকে করতে উৎসাহ যোগাতেন “। (এমদাদে ফতোয়া)
মৌলভী আশরাফ থানভী প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও কিয়াম অনুষ্ঠানকে বৈধ ফতোয়া দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি বরং নূর নবী হযরত মুহম্মদ ছল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে মীলাদ ও কিয়াম অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারেন- তা দৃঢ়তার সহিত বিশ্বাস রাখত । এমদাদে ফতোয়ার ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
- “অর্থাৎ- আমাদের আলেমগণ প্রচলিত মীলাদ ও কিয়াম নিয়ে অনেক ঝগড়া বিভেদে লিপ্ত হয়েছে। এতদসত্ত্বেও আমরা মীলাদ ও কিয়ামকে বৈধ বা ‘পূণ্যময় আমল’ মনে করি । যেহেতু ইহা বৈধ পন্থায় আদায় করার সুযোগ আছে সেহেতু এমতাবস্থায় বিরোধী দলের এত বাড়াবাড়ি মোটেই ঠিক নয় । প্রকৃত পক্ষে মক্কা ও মদীনা শরীফের হক্কানী ও রব্বানী ওলামা মাশায়েখের অনুকরণই আমাদের জন্য যথেষ্ট । অর্থাৎ হেরেমাইন শরীফে মীলাদ কিয়াম হতো, তাদের অনুকরণে আমরাও করব । অবশ্য কিয়ামের সময় নূরনবীর জন্মের খেয়াল না করা উচিত । এ কথাও চির সত্য যে, যদি মীলাদ মজলিসে হুযূরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত হতে পারেন, এমন বিশ্বাস স্থাপনে কোন দোষ নেই । কারণ জড় জগত স্থান ও কাল হতে মুক্ত নয় । তবে রুহানী জগত স্থান কাল হতে সম্পূর্ণ মুক্ত বিধায় নবী করীম রাউফুর রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা মীলাদ মাহফিলে হাজির হওয়া মোটেই অসম্ভব নয় ।“