তিনি রাখলেন রোযা আর আপনারা করেন ঈদ, আপনারা খান মিষ্টি, গরু জবাই করেন, মিছিল করেন!!!

কিছুদিন পূর্বে ফকেহানী ফেরকার অনুসারী হারামে মশগূল এক বিদ‘য়াতী, বদচরিত্র, নামধারী এক মুফতে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ে আলোচনায় বলেছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বার হিসেবে বিলাদত শরীফ পালন করেছেন আর আপনারা পালন করেন তারিখ হিসেবে। তিনি রাখলেন রোযা আর আপনারা করেন ঈদ, আপনারা খান মিষ্টি, গরু জবাই করেন, মিছিল করেন।
তার এই বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে যে, এই নামধারী মুফতে বিলাদত শরীফ পালনকে স্বীকার করে নিয়েছে। যেহেতু বিলাদত শরীফ পালনকে অস্বীকার করা মানে হাদীছ শরীফ অস্বীকার করা, তাই স্বীকার না করে উপায় কী?

বিলাদত শরীফ পালন করতে হবে, তাই বিলাদত শরীফ পালনের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইছনাইনিল আযীম রোযা রাখলেন। এর দ্বারা এটা নির্দিষ্ট করে দেননি যে, বার হিসেবেই পালন করতে হবে এবং রোযাই রাখতে হবে। তারিখ হিসেবে পালন করা যাবে না এবং রোযা ছাড়া অন্য কোন আমল করা যাবে না, এর স্বপক্ষে কোন দলীল কী এই বিদ‘য়াতী মুফতে দেখাতে পারবে?
যেহেতু হাবীবুল্লাহ. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ স্মরণ করে শুকরানা স্বরূপ ইছনাইনিল আযীম রোযা রেখেছেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উক্ত সুন্নত মুবারক পালনার্থে ইছনাইনিল আযীম রোযা রেখেছেন। আর তাই রাজারবাগ দরবার শরীফেও ইছনাইনিল আযীম রোযা রাখা হয়। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু প্রতি ইছনাইনিল আযীম রোযা রাখেননি। 
আবার যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইছনাইনিল আযীম রোযা রেখেছেন কিন্তু পবিত্র ১২ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ উদযাপন করতে নিষেধ করেননি ও রোযা ছাড়া অন্য কোন আমল করতে নিষেধ করেননি। তাই এ ব্যাপারে কাদিয়ানীদের মতো নতুন কোন শরীয়ত জারী করার অধিকার কারো নেই।
এছাড়াও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র বিলাদত শরীফ দিবস (পবিত্র ১২ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ)ও উদযাপন করেছেন। 
যেমন আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ফি মাওলিদি সাইয়্যিদি ওয়ালাদি আ’যম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা ছালিছ উর্দূ তরজমাতি মা’য়া ইতেরাযাত কে তাহক্বিক্বী জওয়াবাত আওর তাফছিলী হালাতে মছান্নিফ কে সাত বা’নামে নে’য়মাতে কুবরা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিতাবের ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
يَوْمَ مَوْلِدِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَبَحَ حَضْرَتْ اَبُوْ بَكْرٍ الصّـِدّيْقُ عَلَيْهِ السَّلَامَ مِائَةَ نَاقَةٍ وَتَصَدَّقَ بِـهَا
অর্থ : “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিবসে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ১০০ উট যবেহ করতেন এবং তা বিলিয়ে দিতেন।”
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে-
تَصَدَّقُ حَضْرَتْ اَبُوْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فِـىْ ذٰلِكَ بِثَلَاثَةِ اَقْرَاصِ مِنْ شَعِيْرِ
অর্থ : “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিবসে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ৩ গামলা গম বিলিয়ে দিতেন।”
অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জবাই করেছেন, দান-ছদক্বাও করেছেন। 
সুতরাং দেখা গেল যে, মিষ্টি খাওয়া, গরু জবাই করা বা খুশি প্রকাশ করা প্রত্যেকটিই ইসলামী শরীয়ত সিদ্ধ আমল।
উক্ত মুর্খ মুফতের বক্তব্যে যেটা বুঝা যাচ্ছে রোযা হচ্ছে ঈদের বিপরীত বা রোযা ঈদের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্তু ইসলামী শরীয়ত কি এভাবেই বিষয়টি ফায়সালা করে দিয়েছে? বরং ইসলামী শরীয়ত বছরে ৫ দিন রোযা রাখা নিষিদ্ধ করেছে। এখন যে কেউ চাইলে এই ৫ দিন বাদ দিয়ে সারা বছরই রোযা রাখতে পারে? তখন কি উক্ত ব্যক্তি উক্ত সময়ে খুশি প্রকাশ বা ঈদ করতে পারবে না? ইসলামী শরীয়ত কি এতে বাধা প্রদান করে?
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ هٰذَا يَوْمُ عِيْدٍ جَعَلَهُ اللهُ لِلْمُسْلِمِيْنَ فَمَنْ جَاءَ اِلَى الْـجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ وَاِنْ كَانَ طِيْبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسّوَاكِ‏.‏
অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই দিনকে মুসলমান উনাদের জন্য পবিত্র ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি পবিত্র জুমুআর নামায আদায় করতে আসবে, তিনি যেন গোসল করেন এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগান। আর মিসওয়াক করাও কর্তব্য।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১০৯৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৭৩৫৫)
এখন জুমুয়ার দিন ঈদের দিন হওয়ার কারণে, অন্য কোন কারণে নয়, শুধুমাত্র ঈদের দিন হওয়ার কারণে ইসলামী শরীয়তে জুমুয়ার দিনে কি রোযা রাখা নিষিদ্ধ?
আবার শরীয়ত মুতাবিক আশূরার রোযা রাখার বিধান রয়েছে। এখন যদি আশূরার দিনটি জুমুয়ার দিন হয় তাহলে আশূরার রোযা রাখার কারণে কি জুমুয়ার ঈদের বিধান বাতিল হয়ে যাবে?
আরাফা দিন ঈদের দিন আবার আরাফা দিবসের রোযা পিছনের এক বছরের এবং সামনের এক বছরের গুনাহখতা ক্ষমা হওয়ার কারণ।
এখন আরাফা দিন ঈদের দিন হওয়ার কারণে কি আরাফা দিবসের রোযা রাখা বারণ হবে?
নাকি আরাফা দিবসের রোযা রাখার কারণে আরাফা দিন ঈদের দিন হওয়া বাতিল হবে?
এর উত্তর মূর্খ বিদ‘য়াতী মুফতের কাছে আছে কি?