ওহাবী বিদয়াতীদের একজন আপত্তি করেছে, “নবীজী বিলাদ!!
তাদের এ কথা শুনে মনে হয় রোজা রাখা মনে হয় খুব দুঃখের বিষয়, শোকের বিষয়। তাই সেদিন ঈদ করা যাবেনা। নাউযুবিল্লাহ! তাদের কাছে কেন জানি ঈদ ও রোজা সাংঘর্ষিক মনে হয়। মূলত রোজা রাখা কোন দুঃখের বিষয় নয় বরং রোজা রাখাও ঈদ বা খুশির অংশ। হাদীছ শরীফ থেকে আমরা জানি পবিত্র আরাফার দিন হচ্ছে ঈদের দিন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ يَوْمَ عَرَفَةَ وَيَوْمَ النَّحْرِ وَأَيَّامَ التَّشْرِيقِ عِيدُنَا أَهْلَ الإِسْلاَمِ
অর্থ: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আরাফার দিন, নহর বা কুরবানীর দিন এবং আইয়্যামে তাশরীক (অর্থ্যাৎ ১১, ১২ ও ১৩ ই জিলহজ্জ) আমাদের মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। (দলীল: নাসাঈ শরীফ কিতাবুল হজ্জ : হাদীস নম্বার ৩০০৪, আবু দাউদ – কিতাবুছ সিয়াম : হাদীস ২৪১৯, তিরমিযী শরীফ- কিতাবুছ ছিয়াম: হাদীস ৭৭৩)
আর আরাফা হচ্ছে ৯ যিলহজ্জ শরীফ। যেদিন রোজা রাখার অনেক ফযিলত হাদীছ শরীফে আছে। যিলহজ্জ মাসে প্রথম ১০ দিন রোজা রাখার ফযীলতও হাদীছ শরীফে আছে। সূতরাং রোজা ও ঈদ সাংঘর্ষিক কোন আমল নয়। আরাফার দিনে রোজা রাখার মাধ্যমে ঈদ পালন হচ্ছে।
সবাই জানে জুমুয়ার দিন হচ্ছে ঈদের দিন। উল্লেখ্য যে রমজান মাসের জুমার দিনসমূহে যে রোজা রাখা হয় বিদয়াতিদের বক্তব্য মোতাবেক সেদিন কি ঈদের দিন বাদ যাবে? নাকি সেদিন কি রোজা রাখা বন্ধ রাখতে হবে?
অনুরুপভাবে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন যদি সোমবার হয় তাহলে কি সেদিন ঈদ বাদ দিয়ে রোজা রাখতে হবে?
হাদিস শরীফে ৫ দিন রোজার রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। উক্ত পাঁচদিনের কোনদিন যদি সোমবার পড়ে; সেদিন কি বিদয়াতিরা রোজা রাখবে? রোজা রাখলে শরীয়তে কি সেটা গ্রহণযোগ্য হবে? বিদয়াতিরা এসব প্রশ্নের কি জবাব দেবে?
নবীজী রাখলেন রোজা আপনারা করেন ঈদ- এ বিষয়ে বলতে হয়, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের দিন ঈদ পালন আমরা নতুন করছি না। বরং মুসলিম জাহানের সবাই ঈদ পালন করে আসছেন। বিশ্ববিখ্যাত কিতাব ‘মাওয়াহিবু লাদুন্যিয়াহ’ কিতাবে ১ম খন্ড ৭৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
ولا زال أهل الإسلام يحتفلون بشهر مولده عليه السلام، ويعملون الولائم، ويتصدقون في لياليه بأنواع الصدقات، ويظهرون السرور، ويزيدون في المبرات، ويعتنون بقراءة مولده الكريم، ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم. ومما جرب من خواصه أنه أمان في ذلك العام، وبشرى عاجلة بنيل البغية والمرام، فرحم الله امرءا اتخذ ليالي شهر مولده المبارك أعيادا، ليكون أشد علة على من في قلبه مرض وإعياء داء".
অর্থ: সব সময়ই মুসলমানগন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদত শরীফ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। এ উপলক্ষ্যে দাওয়াতের ব্যবস্থা করে এবং রবিউল আউয়াল মাসের রাতগুলোতে সকলে সাধ্যানুযায়ী দান সদকাহ করে। খুশি প্রকাশের পাশা পাশি অধিকহারে নেক আমল ও মীলাদ শরীফ উদযাপন করে। এভাবে প্রত্যেক মুসলামান মীলাদ শরীফ উনার বরকত সমূহের ফয়েজ ও প্রেরনা লাভ করে। পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলের পরীলক্ষিত উপকারীতার মধ্যে একটি এই যে , যে বছর পবিত্র মীলাদ শরীফ উদযাপন করা হয় সে বছর শান্তি কায়েম থাকে। তাছাড়া নেক মকছুদ এবং অন্তরের আকাঙ্খা দ্রুত পূর্ণ হওয়ার খোশ খবর প্রদান করে। সূতরাং আল্লাহ পাক সে ব্যক্তির উপর রহম করুন, যে পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাস উনার রাত গুলোকে ঈদ হিসাবে উদযাপন করে, তার কঠিন রোগকে বাড়িয়ে তুলেছে, যার অন্তরে রোগ দানা বেধেঁ রয়েছে।”
“হাদায়েকুল আনোয়ার” ৫৩ পৃষ্ঠায় আরো বর্নিত আছে
فحقيقٌ بيومٍ كانَ فيه وجودُ المصطفى صلى الله عليه وسلم أَنْ يُتَّخذَ عيدًا، وخَليقٌ بوقتٍ أَسفرتْ فيه غُرَّتُهُ أن يُعقَد طالِعًا سعيدًا،
অর্থ: এ দিনের প্রকৃত অবস্থান হলো , যেহেতু এদিন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ হয়েছে তাই এ দিন ঈদ উদযাপন করাই হচ্ছে প্রকৃত দাবী। এদিনের এক শুভক্ষনেই তো সেই আলোকিত মহা উজ্জল চেহারা মুবারক পৃথিবী দর্শন করেছে তবে কেন ঈদ হবে না?
সূতরাং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রোজ রেখেছেন আর উম্মত হয়ে আপনারা ঈদ করছেন এমন অহেতুক কথা যারা বলে তারা মূলত মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।