জওয়াবঃ ওরস আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ ওলীমা বা বিবাহের খানা, জিয়ারত, বিবাহের দাওয়াত, বাসর যাপন ইত্যাদি। পারিভাষিক ও রূপক অর্থ হলো- কোন আওলিয়া-ই-কিরাম ও বুযুর্গানে দ্বীনের ইন্তেকালের দিন ফাতিহা পাঠ উপলক্ষ্যে যে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং সেই উপলক্ষ্যেই যদি ওয়াজ মাহ্ফিল, মীলাদ-মাহ্ফিল, যিকির-আযকারের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে তা অবশ্যই শরীয়তসম্মত হবে। তবে তাতে কিছু শর্ত-শারায়েতও রয়েছে। যেমন- বেপর্দা-বেহায়াপনা, গান-বাজনা, মেলা ইত্যাদি শরীয়তের খেলাফ কোন কাজ যেন করা না হয়। পূর্ববর্তী যামানায় ওরস শব্দ ব্যবহার করাকে ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ দোষণীয় মনে করেননি। কিন্তু পরবর্তী যামানায় যেহেতু ওরসের নাম দিয়ে বেপর্দা, বেহায়াপনা, গান-বাজনা, মেলা ইত্যাদি বেশরা কাজ শুরু হয়ে যায় তাই পরবর্তী হক্কানী-রব্বানী আলেমগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নেক বা দ্বীনী কাজে ওরস শব্দ ব্যবহার না করে ‘ঈসালে সাওয়াব’ বা সাওয়াব রেসানী শব্দ ব্যবহার করতে হবে। এর দলীল স্বরূপ নিম্নের আয়াত শরীফ উল্লেখ করা হয়।
আল্লাহ্ পাক কোরআন শরীফে বলেন,
يا ايها الذين امنوا لا تقولوا راعنا وقولوا انظرنا واسمعوا وللكفرين عذاب اليم.
অর্থঃ॥ “হে ঈমানদারগণ তোমরা ‘রঈনা’ বলোনা ‘উনজুরনা’ বল এবং শ্রবণ কর (বা শুনতে থাক), আর কাফেরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।”
এ আয়াত শরীফের শানে নুযুলে বলা হয়, ইহুদীরা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেবার জন্য ‘রঈনা’ শব্দ ব্যবহার করত যার একাধিক অর্থ।
একটি অর্থ হলো “আমাদের দিকে লক্ষ্য” করুন যা ভাল অর্থে ব্যবহৃত হয়। আর খারাপ অর্থে হে মূর্খ, হে মেষ শাবক। আর হিব্রু ভাষায় এটি একটি বদ্দোয়া।
ইহুদীরা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘রঈনা’ বলে সম্বোধন করত। যাতে প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল খারাপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করা। অপরদিকে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু গণ ‘রঈনা’ শব্দের ভাল অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করলে তখন ইহুদীরা খারাপ অর্থ চিন্তা করে হাসাহাসি করত। এতে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কষ্ট পেতেন। তবুও তিনি কিছু বলতেন না। কেননা আল্লাহ্র রসূল হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহী ছাড়া কোন কথা বলতেন না।
যেমন কোরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
وما ينطق عن الهوى ان هو الاوحى يوحى.
অর্থঃ॥ “তিনি (হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী ব্যতীত নিজের থেকে মনগড়া কোন কথা বলেন না।” (সুরা নজম/ ৩,৪)
এর ফলশ্রুতিতে আল্লাহ্ পাক কোরআন শরীফের আয়াত নাযিল করে ‘রঈনা’ শব্দের বদলে ‘উনজুরনা’ শব্দ ব্যবহার করতে বললেন। কারণ ‘রঈনা’ শব্দ ভাল খারাপ উভয় অর্থে ব্যবহৃত হলেও ‘উনজুরনা’ শব্দ শুধুমাত্র ভাল অর্থেই ব্যবহৃত হত।
তাই যে সকল শব্দ ভাল মন্দ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়, সে সকল শব্দ ব্যবহার না করে তার পরিবর্তে উপরোক্ত আয়াত মোতাবেক যেসব শব্দ শুধুমাত্র ভাল অর্থেই ব্যবহৃত হয় তাই ব্যবহার করতে হবে।