উলামায়ে আহনাফের অভিমত

১. হাদিছ ভাষ্যকার ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি  ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদযাপনের পক্ষে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। নিম্নে এর ক্রিয়দাংশ উল্লেখ করা হল। 
তিনি বলেন
 ان الزاهد القدوة المعمر ابا اسحاق ابراهيم بن عبد الرحيم بن جماعة لما كان بالمدينة النبوية علي ساكنها أفضل الصلوة واكمل التحية كان يعمل طعاما في المولد النبي صلي الله عليه وسلم ويطعم الناس …………………………….. وسميته بالمورد الروي في مولد النبي
  • অর্থ- ‘‘অনুসরণীয় সূফি আবু ইসহাক ইবরাহীম বিন আব্দর রহীম বিন জামায়াহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন মদিনা শরীফে ছিলেন, তখন তিনি মিলাদুন্নবী উদযাপন উপলক্ষে খাবার তৈরী করে মানুষদের খাওয়াতেন আর বলতেন- ‘আমার পক্ষে যদি সম্ভব হতে, তাহলে পুরো মাস জুড়ে মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করতাম।’ আমি মুল্লা আলী ক্বারী বলছি- আমি যেহেতু (ইবনে জামায়াহর মত সম্পদ ব্যয় করে) যিয়াপত করতে অক্ষম, সেহেতু (ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনে) এ ক’টি পৃষ্ঠা লিখলাম, যাতে এগুলো এমন অপ্রকাশ্য যিয়াফত হয়ে যায়, যা শুধু মাস বা বছর নয়; বরং যুগ যুগ ধরে চলমান থাকবে। আর এর (পৃষ্ঠাগুলোর) নাম রাখলাম ‘আল-মাওরিদুর রবী ফি মাওলিদিন্ নবী।’’ 
  • (মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি , আল মাওরিদুর রবী ফি মাওলিদিন নবী) 

২. ‘রুহুল বয়ান’ গ্রন্থাকার আল্লামা ইসমাঈল হক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন 
ومن تعظيمه عمل المولد اذالم يكن فيه منكر قال السيوطي قدس سره يستحب لنا إظهار الشكر لمولده عليه السلام-

  • অর্থ- ‘শরীয়তে নিষিদ্ধ নয় এমন কাজ দ্বারা মিলাদুন্নবী উদযাপন করা রাসূলুল্লাহকে সম্মান করার নামান্তর। 

ইমাম সুয়ূতী কুদ্দিসা সিররুহ বলেন- মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র জন্য শোকরিয়া জ্ঞাপনের বহিঃপ্রকাশ করা আমাদের জন্য মুসত্মাহাব।’
(আল্লামা ইসমাঈল হক্কী, রুহুল বয়ান)

৩. শাইখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন - 
 لايزال اهل الاسلام يحتفلون بشهر مولده صلي الله عليه وسل ويعملون الولائم ………………… بقراأة مولده الكريم


  • মিলাদুন্নবীর মাসে মুসলিমগণ সর্বদা মিলাদ মাহফিল করে আসছেন, খানা পিনার ব্যবস্থা করে থাকেন, আনন্দ প্রকাশ করেন, অধিক নেক আমল করেন এবং মিলাদুন্নবীর গঠনাবলী বর্ণনা করেন।
(শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী, মা ছাবাতা বিস্-সুন্নাহ ফি আইয়ামিন সানাহ)

৪. আল্লামা শাহ্ আব্দুর রহিম মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন 
كنت اصنع في ايام المولد طعاما صلة بالنبي صلي الله عليه وسلم ……………. هذا الحمص متبهجا شاشا

  • অর্থ- ‘মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন উপলক্ষে আমি প্রতি বছর খানা-পিনার ব্যবস্থা করতাম; কিন্তু এক বছর তেমন খানা-পিনার ব্যবস্থা করতে না পেরে কিছু ভাজা চনাবুট মানুষদেরকে দিলাম। অতঃপর আমি রালুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে দেখলাম যে, আমার ভাজা চনাবুট উনার সামনে আছে এবং তিনি আনন্দিত।’ (শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী- আদ্ দুররুছ ছমীন)

৫. শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেন-
وكنة قبل ذالك بمكة المعظمة في مولد النبي صلي عليه وسلم في يوم ولادةه والناس يصلون علي النبي صلي الله عليه وسلم ………………… انوار الرحمة

  • অর্থ- ‘ইতিপূর্বে আমি মিলাদুন্নবী উদযাপনের সময় মক্কা শরীফ ছিলাম। যখন মানুষেরা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওপর দরুদ পাঠ করছিলেন এবং সেসকল ঘটনা বর্ণনা করছিলেন, যা তাঁর বিলাদত শরিফের সময় এবং বিলাদতের পর প্রকাশ পেয়েছিল। অতঃপর আমি দেখতে পেলাম যে, মাহফিলের ওপর তাজাল্লিয়াতের বর্ষণ শুরু হয়েছে। আমি বলছি না যে, এ দৃশ্য শুধু চর্ম চক্ষু দ্বারা দেখেছি। আর এটা বলছি না যে, শুধু অমত্মরের চক্ষু দ্বারা দেখেছি। (অর্থাৎ উভয় চোখ দ্বারাই দেখেছি) আল্লাহ অধিকতর জ্ঞাত সুতরাং যাই হোক না কেন, আমি চিমত্মা করে বুঝতে পেরেছি যে, মূলতঃ নূরের তাজাল্লিয়াত ফেরেশতাদের নূরের তাজাল্লিয়াতের সাথে আল্লাহর রহমতও অবতীর্ণ হচ্ছে।’(শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী- ফয়জুল হারামাইন) 

৬. ‘ইলমুছ ছিগাহ’ গ্রন্থকার মুফতি ইনায়াতুল্লাহ কাকুরবী রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেন-

  • ‘হারামাইন শরিফাইন এবং অধিকাংশ ইসলামী দেশে রবিউল আউয়াল মাসে মুসলিমরা মিলাদুন্নবী উদযাপন করেন, মুসলমানদেরকে একত্র করে মিলাদ-মাহফিলের ব্যবস্থা করেন, অধিক পরিমাণে দরুদ শরীফ পাঠ করেন এবং খানা-পিনা বা ফিরনীর ব্যবস্থা করেন। মূলতঃ এটি অত্যমত্ম সওয়াবের কাজ এবং এটি রাসূলুল্লাহর ভালবাসা বৃদ্ধির মাধ্যম।’ ( মুফতি ইনায়াতুল্লাহ- তাওয়ারিখি হাবীবে ইলাহ) 

৭. হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেন-

  •  ‘মিলাদ শরীফ’ পালনের ব্যাপারে আমাদের উলমায়ে কিরাম মতবিরোধ করে থাকেন। এতদসত্তেও আলেমগণ তা বৈধতার পক্ষেমত দিয়েছেন। এটি বৈধ হবার পন্থা থাকা সত্তেও তারা কেন এত কঠোরতা প্রদর্শন করে। আমাদের জন্য হারমাইন শরিফের অনুসরণই যথেষ্ট।’(হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী, শামায়িলে ইমাদাদিয়্যাহ, পৃ.-৯৫) 

৮.  মাওলানা আব্দুল হাই লাকনভী বলেন- ‘যে কোন সময়ে বৈধপন্থায় মিলাদুন্নবী উদযাপন করা সওয়াবের কাজ।
(আব্দুল হাই লাকনভী, ফাতাওয়ায়ে আবদিল হাই, খ. ২য়, পৃ.-২৮৩)